ঢাকা, ০৯ মে, ২০২৫
Banglar Alo

নতুন অর্থবছরের বাজেট : বাড়তি ২ হাজার কোটি টাকা চায় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়

Publish : 12:53 AM, 15 February 2025.
নতুন অর্থবছরের বাজেট : বাড়তি ২ হাজার কোটি টাকা চায় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়

নতুন অর্থবছরের বাজেট : বাড়তি ২ হাজার কোটি টাকা চায় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়

অর্থনৈতিক প্রতিবেদক :

আগামী ২০২৫-২৬ অর্থবছরের বাজেটের জন্য জননিরাপত্তা বিভাগকে ২৮ হাজার ৬৮৭ কোটি টাকার সীমা বেঁধে দেওয়া হয়। তবে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এই বিভাগটি বলছে, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কার্যক্রম সুসংহত ও গতিশীল করার জন্য আরও ২ হাজার ৬৯ কোটি টাকা প্রয়োজন। আগামী বাজেটে এই বাড়তি বরাদ্দের অনুরোধ জানিয়ে এরই মধ্যে অর্থ মন্ত্রণালয়ে চিঠি পাঠিয়েছে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। যৌক্তিকতা আমলে নিয়ে অর্থ মন্ত্রণালয় বাড়তি অর্থায়নের বিষয়টি সক্রিয় বিবেচনা করছে। সংশ্লিষ্ট সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।

স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বলছে, আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় কয়েক বছরে বিভিন্ন বাহিনীর বিশেষায়িত ইউনিট চালু হয়েছে। পাশাপাশি সক্ষমতা বাড়ানোর অংশ হিসেবে বেতন-ভাতা, যানবাহন, অস্ত্র ও গোলাবারুদ, নিরাপত্তা সামগ্রী, যন্ত্রপাতি, তথ্য ও যোগাযোগপ্রযুক্তি সরঞ্জাম, ভবন নির্মাণ খাতে অর্থের চাহিদা বেড়েছে। তবে অর্থ বিভাগ জননিরাপত্তা বিভাগকে ২৮ হাজার ৬৮৭ কোটি ৭৬ লাখ টাকার মধ্যে আগামী বাজেট প্রস্তুত করার নির্দেশনা দিয়েছে, যা চলতি বাজেটের চেয়ে প্রায় ১ হাজার ৮১০ কোটি টাকা বা ৬ দশমিক ৭ শতাংশ বেশি।  

এদিকে বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকার আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীগুলোর কার্যকারিতা ও জবাবদিহি নিশ্চিত করার ক্ষেত্রে অগ্রাধিকার দিয়েছে। জননিরাপত্তা বিভাগ এ কার্যক্রম বাস্তবায়নে কাজ করছে। 

অর্থ ও স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, বাজেটের দুটি অংশের একটি উন্নয়ন বাজেট, অন্যটি অনুন্নয়ন বা পরিচালন বাজেট। জননিরাপত্তা বিভাগের অনুকূলে বরাদ্দের প্রায় পুরোটাই থাকে পরিচালন বাজেটে। চলতি ২০২৪-২৫ অর্থবছরে মোট ২৬ হাজার ৮৭৭ কোটি টাকা বরাদ্দের মধ্যে ২৫ হাজার ১৬৯ কোটি টাকাই রয়েছে এ খাতে। আগামী অর্থবছরের জন্য অর্থ মন্ত্রণালয়ের বেঁধে দেওয়া ২৮ হাজার ৬৮৭ কোটি ৭৬ লাখ টাকার মধ্যে পরিচালন বাজেটে ২৬ হাজার ৮৬৩ কোটি ৯১ লাখ টাকা রাখার প্রস্তাব করা হয়। তবে জননিরাপত্তা বিভাগ থেকে এ খাতে আরও ২ হাজার ৬৯ কোটি টাকা চাওয়া হয়েছে।

অর্থ ও স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা সমকালকে জানান, জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার আন্দোলন দমাতে অতিরিক্ত বল প্রয়োগ করে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। এতে মজুত গোলাবারুদের অধিকাংশই শেষ হয়ে যায়। গণঅভ্যুত্থানের সময় বিশেষ করে পুলিশ বাহিনীর ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়। এর পর ছয় মাস পার হলেও মানুষের জীবন ও সম্পদের নিরাপত্তা স্বস্তিদায়ক পর্যায়ে আসেনি। 

তা ছাড়া অন্তর্বর্তী সরকারের ঘোষণা অনুযায়ী আগামী ডিসেম্বরে সংসদ নির্বাচন হওয়ার কথা। সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্যও আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির উন্নতি জরুরি। এসব যৌক্তিকতা বিবেচনায় নিয়ে দাবি করা বাড়তি টাকার পুরোটা সম্ভব না হলেও কিছু অর্থ দেওয়ার বিষয়ে সক্রিয় বিবেচনা করছে অর্থ মন্ত্রণালয়। 

এ ব্যাপারে জননিরাপত্তা বিভাগের অতিরিক্ত সচিব (প্রশাসন ও অর্থ অনুবিভাগ) মো. আতাউর রহমান খান সমকালকে বলেন, সার্বিক পরিস্থিতি বিবেচনায় নিয়ে অতিরিক্ত বরাদ্দ চাওয়া হয়েছে। বিষয়টি নিয়ে মার্চের প্রথম সপ্তাহে অর্থ মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে বৈঠক রয়েছে। তখনই বরাদ্দ চূড়ান্ত হবে। তবে জননিরাপত্তা বিভাগ আশা করছে, সার্বিক অবস্থা বিবেচনায় নিয়ে বাড়তি বরাদ্দে সম্মতি দেবে অর্থ মন্ত্রণালয়।

পুলিশের সাবেক মহাপরিদর্শক (আইজিপি) মুহাম্মদ নুরুল হুদা সমকালকে বলেন, মানুষের মৌলিক তিনটি চাহিদার মধ্যে একটি নিরাপত্তা। তাই জনগণের যথাযথ নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে বাড়তি বরাদ্দ প্রয়োজন। বিশেষ করে ৫ আগস্ট গণঅভ্যুত্থানের পরে ও আগে অনেক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। সেগুলো কাটিয়ে উঠতে হবে। আবার বাড়তি বরাদ্দের ক্ষেত্রে সরকারের রাজস্ব আদায় কেমন হচ্ছে, সেটিও দেখতে হবে। সব মিলিয়ে যতটুকু বাড়ানো সম্ভব সে অনুযায়ী সিদ্ধান্ত নিতে হবে।    

বাজেট ব্যবস্থাপনা কমিটির বৈঠক

বাড়তি বরাদ্দ চাওয়ার আগে অধীনস্থ দপ্তর, অধিদপ্তর ও সংস্থার প্রতিনিধি নিয়ে গত ১৩ জানুয়ারি স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সম্মেলন কক্ষে জননিরাপত্তা বিভাগের বাজেট ব্যবস্থাপনা কমিটির বৈঠক হয়। মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব নাসিমুল গনির সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত এ বৈঠকে বিভিন্ন সংস্থার প্রতিনিধিরা তাদের দাবি-দাওয়া তুলে ধরেন। বৈঠকের কার্যপত্র অনুযায়ী, আগামী বাজেটে বরাদ্দ বিষয়ে অতিরিক্ত আইজিপি মো. তৌফিক মাহবুব চৌধুরী জানান, পরিচালন বাজেটে বাংলাদেশ পুলিশের ভ্রমণ খরচ, পোশাক, খাদ্যদ্রব্য, পেট্রোল, অয়েল ও লুব্রিকেন্ট, প্রশিক্ষণ, ওষুধ ও প্রতিষেধক, চিকিৎসা ও শল্য চিকিৎসা সরঞ্জাম, মোটরযান, বেতার সরঞ্জাম, আসবাব, পৌরকর খাতে অতিরিক্ত এক হাজার ৩১৫ কোটি ১১ লাখ ৯২ হাজার টাকা প্রয়োজন। 

তবে সার্বিক অর্থনৈতিক পরিস্থিতি বিবেচনায় নিয়ে পরিচালন ব্যয় বাবদ পুলিশের জন্য অতিরিক্ত ৮৫২ কোটি টাকাসহ আগামী বাজেটে মোট ১৮ হাজার ৪৮৩ কোটি টাকা বরাদ্দ রাখার প্রাথমিক সিদ্ধান্ত হয়। চলতি বাজেটে এ খাতে বরাদ্দ রয়েছে ১৭ হাজার ৩৬৭ কোটি ৫৬ লাখ টাকা।    

বর্ডার গার্ড বাংলাদেশের (বিজিবি) প্রতিনিধি অতিরিক্ত মহাপরিচালক (সদরদপ্তর) ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. শাহাদাত শিকদার যৌক্তিকতা তুলে ধরে তাদের পরিচালন বাজেটের আওতায় এক হাজার ১১৫ কোটি ৪৩ লাখ ১৫ হাজার টাকা অতিরিক্ত বরাদ্দ দাবি করেন। মূলত বেতার সরঞ্জাম, চিকিৎসা ও শল্য চিকিৎসা সরঞ্জাম, অস্ত্র ও গোলাবারুদ, নিরাপত্তা সামগ্রী, রেশন, কাঁচামাল ও খুচরা যন্ত্রাংশ, পোশাক, গোয়েন্দা কার্যাবলি, আকাশযান, জলযান, মোটরযান কেনা ও মেরামত খাতে এ বাড়তি বরাদ্দ চাওয়া হয়। 

বৈঠকে বিজিবির পরিচালন বাজেটে অতিরিক্ত চাহিদার প্রায় পুরোটাসহ ৪ হাজার ৬৯১ কোটি টাকা রাখার সিদ্ধান্ত হয়। চলতি বাজেটে এ খাতে বরাদ্দ রয়েছে ৪ হাজার ২৯১ কোটি ৩২ লাখ টাকা।  বাংলাদেশ কোস্টগার্ডের কমান্ডার তাসনিম আহমদ জানান, গভীর সমুদ্র ও সমুদ্রসীমায় চোরাচালান, মাদক, মানব পাচারসহ নানা অপরাধ দমনে আকাশযান (মেরিন হেলিকপ্টার), জলযান এবং ভূমি অধিগ্রহণ খাতে ৩৪৯ কোটি ৫০ লাখ টাকা অতিরিক্ত বরাদ্দ প্রয়োজন। তবে অতিরিক্ত ৬৩ কোটি টাকাসহ কোস্টগার্ডের জন্য পরিচালন বাজেটে মোট ৮৮৮ কোটি টাকা বরাদ্দ রাখার সিদ্ধান্ত হয়। চলতি বাজেটে এ খাতে রয়েছে ৮৩১ কোটি ১৪ লাখ টাকা। 

এভাবে বিভিন্ন সংস্থা থেকে পরিচালন বাজেটের আওতায় ২ হাজার ৮৭৩ কোটি ৩৫ লাখ টাকা বাড়তি দাবি করা হয়। তবে চলমান অর্থনৈতিক নাজুক পরিস্থিতি বিবেচনায় নিয়ে বৈঠকে বাড়তি ২ হাজার ৬৯ কোটি টাকা বরাদ্দের প্রাথমিক সিদ্ধান্ত হয়।   

রাজস্ব বাড়াতে মনোযোগী হওয়ার পরামর্শ

আগামী অর্থবছরের রাজস্ব লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে বৈঠকে সবাইকে মনোযোগী হওয়ার পরামর্শ দেওয়া হয়। সংস্থাগুলোকে নিজ নিজ ক্ষেত্র চিহ্নিত করে সরকারের নির্বাহী আদেশের মাধ্যমে রাজস্ব বাড়ানোর পরিকল্পনা নিতে অনুরোধ জানানো হয়। আগামী অর্থবছরের জন্য জননিরাপত্তা বিভাগসহ এর অধীন বিভিন্ন সংস্থার মোট ১ হাজার ২৪ কোটি টাকার রাজস্ব লক্ষ্যমাত্রা দেওয়া হয়। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি ৯৫৫ কোটি ৮৪ লাখ টাকা রাজস্ব আদায় করার কথা পুলিশের। এ ছাড়া জননিরাপত্তা বিভাগের ১৬ কোটি ২০ লাখ, বিজিবির ২৯ কোটি ৪৭ লাখ, আনসার ও ভিডিপি অধিদপ্তরের ১৯ কোটি ১০ লাখ এবং কোস্টগার্ডকে ৩ কোটি ৪০ লাখ টাকার রাজস্বের লক্ষ্যমাত্রা দেওয়া হয়। চলতি বাজেটে এসব প্রতিষ্ঠানের রাজস্বের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৯৩০ কোটি ৯৪ লাখ ৩৮ হাজার টাকা। 

উল্লেখ্য, আগামী ২০২৫-২৬ অর্থবছরের জন্য প্রাথমিকভাবে ৮ লাখ ৩০ হাজার কোটি টাকা ব্যয়ের পরিকল্পনা করছে অন্তর্বর্তী সরকার। বাজেটের আকার এমন ধরেই আয়-ব্যয়ের খসড়া রূপরেখা তৈরি করেছে অর্থ মন্ত্রণালয়। চলতি ২০২৪-২৫ অর্থবছরের বাজেটের আকার ৭ লাখ ৯৭ হাজার কোটি টাকা।

Banglar Alo

সম্পাদক ও প্রকাশক
বাংলার আলো মিডিয়া লিমিটেড

৮৯ বিজয় নগর, শহীদ সৈয়দ নজরুল ইসলাম শরণি, আজিজ কো-অপারেটিভ মার্কেট (৫ম তলা)। ঢাকা-১০০০

নিউজঃ +৮৮ ০১৩৩২৫২৮২৪১ || [email protected] || বিজ্ঞাপণঃ +৮৮ ০১৩৩২৫২৮২৪৩ || [email protected]

©২০২৩ সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত || banglaralo24.com

Develop by _ DigitalSolutions.Ltd
শিরোনাম বাংলাদেশকে নিজেদের বিষয়ে স্বাধীনভাবে সিদ্ধান্ত নিতে হবে শিরোনাম এটিএম আজহারের আপিলের রায় ২৭ মে শিরোনাম শামীমকে জুতাপেটা করতে চেয়েছিলেন এই অভিনেত্রী শিরোনাম শহীদ পরিবার ও আহতদের ফ্ল্যাট দেবে সরকার শিরোনাম মালয়েশিয়াজুড়ে অভিযানে আটক ৪৫০ বাংলাদেশি শিরোনাম দেশ ছাড়লেন সাবেক রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদ