ঢাকা, ০৯ মে, ২০২৫
Banglar Alo

শহীদ পরিবার ও আহতদের ফ্ল্যাট দেবে সরকার

Publish : 05:18 AM, 08 May 2025.
শহীদ পরিবার ও আহতদের ফ্ল্যাট দেবে সরকার

শহীদ পরিবার ও আহতদের ফ্ল্যাট দেবে সরকার

নিজস্ব প্রতিবেদক :

জুলাই গণঅভ্যুত্থানে শহীদ পরিবার ও চূড়ান্তভাবে অক্ষম আহতদের (গুরুতর আহত) ফ্ল্যাট দেওয়ার উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। রাজধানীর মিরপুরে নেওয়া হচ্ছে দুটি প্রকল্প। জাতীয় গৃহায়ন কর্তৃপক্ষের প্রস্তাবের পরিপ্রেক্ষিতে বিষয়টি পর্যালোচনা করছে গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়। বিষয়টি নিয়ে সম্প্রতি একটি আন্তঃমন্ত্রণালয় সভাও হয়েছে।

গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয় এবং জাতীয় গৃহায়ন কর্তৃপক্ষের কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, দুটি প্রকল্পের মাধ্যমে ১৪শ-১৫শ ফ্ল্যাট নির্মাণের চিন্তা-ভাবনা হচ্ছে। প্রাথমিক প্রস্তাব অনুযায়ী শহীদ পরিবারকে ১২৫০ বর্গফুট ও গুরুতর আহতদের এক হাজার বর্গফুটের ফ্ল্যাট দেওয়া হবে।

জুলাই অভ্যুত্থানের শহীদ ও গুরুতর আহতদের কীভাবে সুবিধা দেওয়া যায়, সেটি নিয়ে চিন্তা-ভাবনা রয়েছে। এজন্য জাতীয় গৃহায়ন কর্তৃপক্ষ এটি নিয়ে কাজ করছে। তারা প্রাথমিকভাবে একটি প্রস্তাবও দিয়েছে। মন্ত্রণালয়ও সেই বিষয়টি পজিটিভলি চিন্তা-ভাবনা করছে।-গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব মো. আব্দুল মতিন।

দুই বছরের মধ্যে প্রকল্পের কাজ শেষ করার লক্ষ্যমাত্রা নিয়ে এগোচ্ছে গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়। প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করবে জাতীয় গৃহায়ন কর্তৃপক্ষ।

প্রাথমিকভাবে দুই প্রকল্পে প্রায় দুই হাজার কোটি টাকার প্রস্তাব দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু গ্যাস, পানি, বিদ্যুৎ, সড়ক, মসজিদ, স্কুল ইত্যাদি সুবিধাগুলো বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে করা হবে। তাই ব্যয় অনেকটাই কমে যাবে। ব্যয়ের বিষয়টি এখনো চূড়ান্ত নয় বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা।

গত বছরের জুলাই মাসে শিক্ষার্থীদের বৈষম্যবিরোধী কোটা আন্দোলন একসময় সরকার পতনের আন্দোলনে রূপ নেয়। শেষে ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানে ৫ আগস্ট প্রধানমন্ত্রীর পদ থেকে পদত্যাগ করে ভারতে পালিয়ে যান শেখ হাসিনা। আন্দোলনে শহীদ হন শত শত ছাত্র-জনতা। আহতও হন কয়েক হাজার মানুষ।

গত ১৫ জানুয়ারি জুলাই-আগস্ট গণঅভ্যুত্থানের ৮৩৪ জন শহীদের তালিকার গেজেট প্রকাশ করে অন্তর্বর্তী সরকার। এছাড়া কয়েক দফায় ‘জুলাই যোদ্ধা’ হিসেবে তিনটি ক্যাটাগরিতে (‘ক’, ‘খ’ ও ‘গ’ শ্রেণি) আহতদের তালিকাও প্রকাশ করা হয়।

এ বিষয়ে একটা চিন্তা-ভাবনা হচ্ছে, কথা উঠেছে আমাদের দিক থেকে এদের (অভ্যুত্থানে নিহত-আহত) জন্য কিছু করা উচিত। সর্বোচ্চ পর্যায় থেকে এটি অনুমোদিত হলে এ বিষয়ে বলা যাবে।-জাতীয় গৃহায়ন কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান সৈয়দ মো. নুরুল বাসির

গত ২৭ ফেব্রুয়ারি ‘ক’ ক্যাটাগরির (অতি গুরুতর আহত) ৪৯৩ জনের নামের তালিকার গেজেট প্রকাশ করা হয়। তালিকা করার দায়িত্বে স্বাস্থ্য বিভাগ থাকলেও তালিকা প্রকাশ করছে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয়। এতে শহীদ ও আহতদের নাম ছাড়াও গেজেট নম্বর, মেডিকেল কেস আইডি, বাবার নাম, বর্তমান ঠিকানা ও স্থায়ী ঠিকানা উল্লেখ রয়েছে।

‘জুলাই গণঅভ্যুত্থান-২০২৪ এ শহীদ পরিবারের সদস্যদের কল্যাণ এবং আহতদের চিকিৎসা ও পুনর্বাসন নীতিমালা, ২০২৫’ অনুযায়ী অতি গুরুতর আহতরা ‘ক্যাটাগরি-এ’ অন্তর্ভুক্ত হবেন। উভয় হাত বা পা বিহীন, সম্পূর্ণ দৃষ্টিহীন, সম্পূর্ণভাবে মানসিক বিকারগ্রস্ত ও স্বাভাবিক কাজ করতে অক্ষম— এমন আহত ব্যক্তি অতি গুরুতর আহত হিসেবে বিবেচিত হবেন।

প্রকল্প দুটি দ্রুত চূড়ান্ত করার প্রক্রিয়া চলছে। এ বিষয়ে প্রধান উপদেষ্টার অনুমোদন নেওয়া হবে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা। তাই এখনই আনুষ্ঠানিকভাবে প্রকল্পের বিষয়ে বিস্তারিত কোনো তথ্য জানাতে রাজি হননি গণপূর্ত মন্ত্রণালয় ও গৃহায়ন কর্তৃপক্ষের কর্মকর্তারা।

এ বিষয়ে গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব (উন্নয়ন অনুবিভাগ-১) মো. আব্দুল মতিন বলেন, ‘জুলাই অভ্যুত্থানের শহীদ ও গুরুতর আহতদের কীভাবে সুবিধা দেওয়া যায়, সেটি নিয়ে চিন্তা-ভাবনা রয়েছে। এজন্য জাতীয় গৃহায়ন কর্তৃপক্ষ এটি নিয়ে কাজ করছে। তারা প্রাথমিকভাবে একটি প্রস্তাবও দিয়েছে। মন্ত্রণালয়ও সেই বিষয়টি পজিটিভলি চিন্তা-ভাবনা করছে।’

বিষয়টি এখনো একেবারে প্রাথমিক পর্যায়ে রয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, ‘এটি নিয়ে আমরা আলোচনা করছি, কোন পর্যায়ে কী করা যায়। প্রকল্প করতে কত টাকা লাগবে, কোথায় করবো, কতজনের জন্য করবো, কীভাবে করবো— সবকিছুই আলোচনার মধ্যে রয়েছে। একটি আন্তঃমন্ত্রণালয় সভায় বিষয়টি নিয়ে আমরা আলোচনা করেছি। একটি প্রকল্প নিতে গেলে অনেকগুলো কনসেপ্টচুয়াল ইস্যু আছে। সর্বোচ্চ পর্যায়ের অনুমোদনের বিষয় রয়েছে।’

জাতীয় গৃহায়ন কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান সৈয়দ মো. নুরুল বাসির বলেন, ‘এ বিষয়ে একটা চিন্তা-ভাবনা হচ্ছে, কথা উঠেছে আমাদের দিক থেকে এদের (অভ্যুত্থানে নিহত-আহত) জন্য কিছু করা উচিত। সর্বোচ্চ পর্যায় থেকে এটি অনুমোদিত হলে এ বিষয়ে বলা যাবে।’

গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয় থেকে জানা যায়, গত ৪ মে প্রকল্প এলাকার ভেতরে প্রয়োজনীয় পরিষেবা (গ্যাস, পানি, বিদ্যুৎ, সড়ক, মসজিদ, স্কুল ইত্যাদি) সুবিধা দিতে একটি আন্তঃমন্ত্রণালয় সভা হয়। সভায় সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়, বিভাগ ও সংস্থার কর্মকর্তারা অংশ নেন। ওই সভায় সভাপতিত্ব করেন গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. নজরুল ইসলাম। এর আগে গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ও নিজেরা একটি বৈঠক করে।

প্রকল্প সংশ্লিষ্ট একজন কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করে বলেন, শহীদ পরিবার ও চূড়ান্তভাবে অক্ষম আহত পরিবারের জন্য এটি করা হচ্ছে। আহতদের তিনটি ক্যাটাগরি করা হয়েছে। ক-ক্যাটাগরির আহতদের আমরা ফলো করবো। শহীদ ও চূড়ান্ত অক্ষম আহত সবাইকে ফ্ল্যাট দেওয়ার চিন্তা-ভাবনা করা হচ্ছে। পূর্ণ সম্মান আমরা নিহত ও আহতদের দিতে চাই।

মিরপুরে জাতীয় গৃহায়ন কর্তৃপক্ষের জমিতে দুটি প্রকল্পের অধীনে আবাসনটা তৈরি করা হবে জানিয়ে তিনি বলেন, ‘মিরপুর-১৪ নম্বর সেক্টরে পুলিশ স্টাফ কলেজের উল্টো দিকে একটি প্রকল্প নেওয়া হবে। মিরপুর-৯ এ পল্লবী থানার পেছনে আরেকটি প্রকল্প নেওয়ার চিন্তা-ভাবনা হচ্ছে।’

শহীদ পরিবারকে ১২৫০ বর্গফুট ও চূড়ান্তভাবে অক্ষম আহত পরিবারকে এক হাজার বর্গফুটের ফ্ল্যাট দেওয়া হবে বলেও জানান ওই কর্মকর্তা।

তিনি আরও জানান, সেখানে সব ধরনের পরিষেবাসহ নাগরিক সুবিধা নিশ্চিত করা হবে। প্রকল্প এলাকায় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, মসজিদ, দোকান, কমিউনিটি সেন্টার, মার্কেটসহ অন্য প্রয়োজনীয় স্থাপনা নির্মাণ করা হবে। দু’বছরের মধ্যে প্রকল্প দুটি শেষ করা হবে। জাতীয় গৃহায়ন কর্তৃপক্ষ প্রকল্প দুটি বাস্তবায়ন করবে।

আরও যেসব সুবিধা পাবেন শহীদ পরিবার ও আহতরা

জুলাই অভ্যুত্থানে আহতদের ধরনভেদে ‘ক’, ‘খ’, এবং ‘গ’ শ্রেণিতে ভাগ করে সুযোগ-সুবিধা দিচ্ছে সরকার। মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয় থেকে জানানো হয়েছে, আহত বা জুলাই যোদ্ধারা আজীবন চিকিৎসা সুবিধা পাবেন এবং তারা ভাতাও পাবেন। যারা অতি গুরুতর আহত (ক-শ্রেণি) তারা এককালীন পাঁচ লাখ টাকা পাবেন এবং প্রতি মাসে ২০ হাজার টাকা করে ভাতা পাবেন। একটি অঙ্গহানি হয়েছে এমন আহত (খ-শ্রেণি) যারা আছেন তারা প্রতি মাসে ১৫ হাজার টাকা ভাতা পাবেন এবং তারা এককালীন তিন লাখ টাকা পাবেন। সামান্য আহত (গ-শ্রেণি) যারা ছিলেন, চিকিৎসা নিয়েছেন, ভালো হয়ে গেছেন, তারা চাকরিসহ পুনর্বাসন কর্মসূচিতে অগ্রাধিকার পাবেন। তারা কোনো ভাতা পাবেন না।

যারা শহীদ হয়েছেন তাদের পরিবারকে সঞ্চয়পত্রের মাধ্যমে ৩০ লাখ টাকা দেওয়া হচ্ছে। চলতি অর্থবছরে শহীদ পরিবারকে ১০ লাখ টাকা দেওয়া হচ্ছে, আগামী অর্থবছরে তারা বাকি ২০ লাখ টাকার সঞ্চয়পত্র পাবেন।

Banglar Alo

সম্পাদক ও প্রকাশক
বাংলার আলো মিডিয়া লিমিটেড

৮৯ বিজয় নগর, শহীদ সৈয়দ নজরুল ইসলাম শরণি, আজিজ কো-অপারেটিভ মার্কেট (৫ম তলা)। ঢাকা-১০০০

নিউজঃ +৮৮ ০১৩৩২৫২৮২৪১ || [email protected] || বিজ্ঞাপণঃ +৮৮ ০১৩৩২৫২৮২৪৩ || [email protected]

©২০২৩ সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত || banglaralo24.com

Develop by _ DigitalSolutions.Ltd
শিরোনাম বাংলাদেশকে নিজেদের বিষয়ে স্বাধীনভাবে সিদ্ধান্ত নিতে হবে শিরোনাম এটিএম আজহারের আপিলের রায় ২৭ মে শিরোনাম শামীমকে জুতাপেটা করতে চেয়েছিলেন এই অভিনেত্রী শিরোনাম শহীদ পরিবার ও আহতদের ফ্ল্যাট দেবে সরকার শিরোনাম মালয়েশিয়াজুড়ে অভিযানে আটক ৪৫০ বাংলাদেশি শিরোনাম দেশ ছাড়লেন সাবেক রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদ